কমলগঞ্জ প্রতিনিধি::
ঈদুল আযহা উপলক্ষে আগাম বুকিং কম চায়ের রাজ্য
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ ফি দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁদের মতে, প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে এখন থেকে কেউ অযথা প্রবেশ করে বন্য প্রাণীদের বিরক্ত করবেন না। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা।
নতুন ও আগের প্রবেশ ফি মিলিয়ে দেখা গেছে, এবার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের ১৩ জুন লাউয়াছড়ার টিকেট কাউান্টারের কালেক্টরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ৯টি আইটেমে নতুন করে নির্ধারিত টাকা প্রবেশ ফি নেওয়ার নির্দেশনা দেয় বন বিভাগ। আগে লাউয়াছড়ায় প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রবেশ ফি ছিল ৫০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা। অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ ফি ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। জাতীয় উদ্যানটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগে বিদেশি পর্যটকদের গুনতে হতো ৫০০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এ ছাড়াও শুটিংয়ের জন্য প্রবেশ ৬ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়। পিকনিক পার্টির জন্য জনপ্রতি ১১ টাকা নেওয়া হলেও নতুন সূচিতে এখন তা হয়েছে ২৩ টাকা। পার্কিংয়ের জন্য ছোট গাড়ির ফি ছিল ২৭ টাকা; এখন সেটা বেড়ে ১১৫ টাকা এবং বড় গাড়ি ফি ১০৫ থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে যান আমিনুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন যে, ‘পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে শ্রীমঙ্গল এসেছি। আজ সকালে লাউয়াছড়ায় গেট থেকে ফিরে এলাম। লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করতে প্রায় ৮০০ টাকার টিকিট কাটতে হচ্ছে। পরে আর ভেতরে প্রবেশ করিনি।
লাউয়াছড়া উদ্যানের ট্যুরিষ্ট গাইড শাহীন মিয়া বলেন যে, টিকিটের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই গেট থেকে ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন। গেটের সামনে তাই ভিড় বেশি থাকে।
বিষয়টি নিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফের (সিউ) সমন্বয়ক সোহেল শ্যাম বলেন যে, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। এখানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে পর্যটক কম ঢুকবেন। আমরা প্রায়ই দেখি, পর্যটকেরা লাউয়াছড়ায় ঢুকে প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করেন, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। হইহুল্লোড় করেন। এতে প্রাণীরা সমস্যায় পড়ে।
সোহেল শ্যাম আরও বলেন যে, আমরা বন বিভাগের কাছে দাবি জানিয়েছি, যেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে পর্যটক ঢুকতে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বছরের যে সময়ে প্রাণীদের প্রজনন মৌসুম, সেই সময়ে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা উচিত। এতে এখানকার প্রাণীরা টিকে থাকবে। করোনা মহামারির সময়ে লাউয়াছড়া বেশ কিছু মাস বন্ধ ছিল। সেই সময়ে প্রাণীরা তাদের মতো করে লাউয়াছড়ায় বিচরণ, প্রজনন করতে পেরেছে।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম বলেন যে, চলতি বছর মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া, হবিগঞ্জের সাতছড়ি, শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বন গুলোতে প্রবেশ ফি বাড়িয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিনিও মনে করেন লাউয়াছড়ায় প্রবেশ ফি বাড়ানোর ফলে এখন থেকে পর্যটক কিছুটা কম প্রবেশ করবেন। তাঁর মতে, কম পর্যটক ঢুকলেও সরকারের আগের মতোই রাজস্ব আদায় হবে। এটি প্রাণীদের জন্যও বেশ ভালো।