আমিনুল ইসলাম (হিমেল)
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য টিকা প্রদান, নমুনা সংগ্রহ, রোগীদের পরিচর্যা, করোনাসামগ্রী ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও করোনা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে দেশব্যাপী সব সরকারি হাসপাতালে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে মৌলভীবাজারে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫ হাজার ৮৮৮ টাকা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই টাকা খরচ না করায় প্রায় কোটি টাকা ফেরত গেছে। জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এমনটি হয়েছে। এদিকে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির কয়েকটি জেলার মধ্যে প্রবাসী অধ্যুষিত ও সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলা অন্যতম। কয়েকদিন ধরে করোনা নমুনা পরীক্ষা গড়ে অর্ধেকই পজিটিভ আসছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলাবাসী। দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সে আলোকে বাড়ানো হয়নি আইসিইউ, সিসিইউ কিংবা অক্সিজেন শয্যা। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখন পর্যন্ত জেলার কোনো হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়নি। এ নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। জেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ মন্তব্য করছে, ফেরত যাওয়া টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগালে পরিস্থিতির এত অবনতি হতো না।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বরাদ্দ এসেছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর মধ্যে ফেরত গেল ৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৫ টাকা। রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০, ফেরত গেল ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০, কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ২৫ লাখ ১২ হাজার ৯৬০, ফেরত গেল ২০ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫, জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ১৫ লাখ ৯১ হাজার ২৪০, ফেরত গেল ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭শ, বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ২১ লাখ ১৭ হাজার ৬৮০, ফেরত গেল ১৭ লাখ ২ হাজার ৯৭৫, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫২০, ফেরত গেল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬শ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫২০ এবং ফেরত গেল ১২ লাখ ৩৯ হাজার ২০৪ টাকা। এদিকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ২শ এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ লাখ ২১ হাজার ৬০ টাকা বরাদ্দ এলে পুরোটাই ব্যয় করা হয়। এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দাশ জানান, প্রশিক্ষণ, টিকা প্রদান ও নমুনা সংগ্রহ বাবদ আমার উপজেলায় টাকা খরচ করা হয়েছে।
পুরো অর্থবছর পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারতেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকবলের সঙ্কট থাকায় ঠিকমতো কাজ করা সম্ভব হয়নি। জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ বলেন, গত অর্থবছরে কয়েকজন ছুটিতে ছিলেন, আবার লোকবলও কম ছিলম যে কারণে পুরো টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যে কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়।, যে কারণে ব্যয়ের বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার ছিল না। তবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে হয়তো আরও কিছু কাজ করা সম্ভব হতো।