সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের অবাধেই চলছে হিজল করচ গাছ কাটা আর অতিথি পাখি শিকারের মহোৎসব। দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট মাছ, অতিথি পাখির অভয়ারণ্য খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জ তাহিরপুর উপজেলার টাংঙ্গুয়ার হাওরে অবাদেই চলছে হিজল করচ গাছ কাটা আর অতিথি পাখি শিকারের মহোৎসব।
জানাযায়, টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি কমার সাথে সাথে হাওর পাড়ের আশপাশের গ্রামের লোকজন দিনেদুপুরে ও রাতের আঁধারে টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্যবর্ধীত ও শীতকালীন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি পাখির একমাত্র আশ্রয় নেয়া হিজল করচ গাছ গুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে অনেকটা খোলামেলাভাবেই। এ যেন দেখার কেউ নেই! পাশাপাশি শীতের শুরু থেকেই সুদূর সাইবেরিয়ারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা টাঙ্গুয়ার হাওরের আসতে শুরু করলেও স্থানীয় একটি পাখি শিকারী চক্র বিষটুপ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে অতিথি পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে যে যার মতো। একদিকে গাছ কাটার কারণে মাদার ফিচারিজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের যেমন কমছে মাছের সংখ্যা অপরদিকে অতিথি পাখি শিকার ও গাছ কাটার কারণে পাখিদের আশ্রয়ের স্থান কমতে থাকায় দিনদিন কমছে অতিথি পাখির সংখ্যাও। অপরদিকে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও। যারফলে এখন টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখি আর মাছের সংখ্যা নেই বললেই চলে। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক Pijush Purkayastha Titu গত ২৩শে নভেম্বর সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের একটি পোস্টে লিখেছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ কাটার বেশ কয়েকটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু হিজল গাছের সাথে কেন এত শত্রুতা…?
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে মন্দিয়াতা ও বিনোদপুর গ্রামের পাশে পলিয়ার বিলের হিজল বাগটি দিনের বেলায় কেটে নিয়ে যাচ্ছে, দেখার যেন কেউ নেই। আমি প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাই এই গাছ কাটার সাথে যারা জরিত অতি সত্তর তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা ও বিনোদপুর গ্রামের পাশে পলিয়ার বিলের চারিদিকে প্রায় ২ কিলোমিটার হিজল বাগটি দিনের বেলায় আবার রাতেও ওই দুই গ্রামের লোকজন কেটে নিয়ে যাচ্ছে।টাংগুয়ার হাওরের পানি কমার সাথে সাথে হিজলের বাগ গুলো ভেসে ওঠায় পলিয়ার বিলের পাশে মন্দিয়াতা ও বিনোদপুর গ্রামের লোকজন কেউ হিজল করচের গাছ কেটে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করছে।
আবার কেউ অন্য কোথাও বিক্রি করছে জীবনের তাগিদে। গত কয়েক মাস পলিয়ার বিলের চারিদিকের হিজল করচ বাগানের প্রায় ২ শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়! টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল করচ বাগানের গাছ কাটার পাশাপাশি হাওরের আশপাশের গ্রামের কয়েকটি পাখি শিকারী চক্র অতিথি পাখি শিকারেও রয়েছে তৎপর। অবাদে গাছ কাটার কারণে একদিকে যেমন কমছে হাওরের সবুজ অরণ্য আর অতিথি পাখির আশ্রয় স্থাল। যারফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের সবুজ অরণ্য আর অতিথি পাখির সংখ্যা। এমনকি হুমকির মুখে রয়েছে জীববৈচিত্র।
অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের নিয়োজিত আনসার সদস্য ও কমিউনিটি গার্ডদের দায়িত্ব অবহেলার ফলেই এর প্রধান কারণ। স্থানীয় একটি প্রবাদ আছে, নয় কুড়ি কান্দা, ছয় কুড়ি বিল- তাহার নাম হইছে টাঙ্গুয়ার বিল। দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট খ্যাত বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি অপরুপ সৌন্দর্যে আর সম্পদে ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওর ৩২২ বর্গ কি.মি জুড়ে বিস্মৃত। বর্ষায়
হাওরের সাগরের বিসৃত থৈ থৈ পানি আর শীতে দিগন্ত বিস্মৃত মাঠ, সারিসারি হিজল করচের সবুজ অরণ্য, অতিথি পাখির কলকালি খুব সহজেই পর্যটকদের মন কাড়ে। দিনদিন হাওরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাওরে মানুষের সংখ্যা বাড়লেও কমছে হাওরে গাছ, মাছ ও শীতকালে অতিথি পাখির সংখ্যা।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খসরুল আলম জানান, আমাদের গোয়ালভরা ধান, হাওরভরা মাছ ছিল। এখন আর তা নেই। পাখির অভয়ারণ্যও আর নেই। রাতের আঁধারে কিছু কতিপয় লোকেরা হাওরের কাছ কেটে নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ঠ করে দিচ্ছে। পলিয়ার বিলের হিজল করচ গাছ কাটার বিষয়টি আমাকে অনেকেই জানিয়েছেন। পরে আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যের বলে দিয়েছি। সেখান থেকে কেউ যাতে আর গাছ কাটাতে না পারে নজর রাখতে। তবে সেখানে দায়িত্বরত কমিউনিটি গার্ডরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আমার এর থেকে রক্ষা পাব।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকায়স্থ টিটু বলেন, পলিয়ার বিলের প্রায় ২ শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে আশপাশের গ্রামের লোকজন। এভাবে গাছ কাটাতে থাকে একসময় সেখানে আর গাছ থাকবেন। পাশাপাশি অতিথি পাখির আশ্রয় স্থাল না থাকার ফলে পাখির সংখ্যাও কমছে। অতিথের ন্যায় সেখানে যদি ২ জন গার্ড দেয়া হয় তাহলে গাছ কাটা বন্ধ করা সম্ভব হবে।হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করলে ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার-প্রচারনার ব্যবস্থা করলে পর্যটন সমৃদ্ধ টাংগুয়ার হাওর তার ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। তা না হলে টাংগুয়ার হাওর দিন দিন মাছ,পাখি ও গাছ-পালা শূন্য হয়ে য় পড়বে।
জানা যায়, টাংগুয়ার হাওর কে ১৯৯৯সালে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা হয়। পরে ২০০০সালের ২০ জানুয়ারী রামসার সাইট হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ২০০৩সালের নভেম্বর থেকে ইজারা প্রথা বাতিল করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় হাওরের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও রামসার নীতি বাস্থবায়নের উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৯সালে হাওরে ১৪১প্রজাতির মাছ,২শত প্রজাতির উদ্ভিদ,দু-শত ১৯প্রজাতির পাখি, ৯৮ প্রজাতির পরাযায়ী পাখি, ১২১ প্রজাতির দেশিও পাখি, ২২প্রজাতির পরাযায়ী হাঁস, ১৯প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী, ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১প্রজাতির উভচর প্রানী এখন হুমকির মুখে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ কাটা ও পাখি শিকারের কোন আপুষ নাই। আমরাও তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর। অলরেডি বন বিভাগের লোকজন ও হাওরে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন গাছ কাটার স্থালে আছেন। বিলের সৌন্দর্য নষ্ট করে যারা বিলের গাছ কাটে নিয়ে যাচ্ছে।