কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
কমলগঞ্জে খেলাফত মজলিসের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কমলগঞ্জ উপজেলা। এখানকার গ্রামের মাঠে-ঘাটে, চা-বাগান ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় গাছে-গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা পাখির দেখা মেলে আর। ভোর বেলা পাখির কলরবে মুখরিত গ্রাম এখন প্রায় পাখি শূন্য। বন-জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র, খাদ্য সঙ্কট ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। এখন আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর এখন আর শোনা যায় না।
শনিবার ( ৫ অক্টোবর ) বিকেল ৩টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের ‘উপজেলা ভূমি অফিস’ কার্যালয়ের সীমানা প্রাচির বাউন্ডারীতে বসে থাকতে দেখা যায় একটি দোয়েল পাখি। একা একা বসে ডাকতে শুনা যায়।
জানা যায়, দোয়েল পাখি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাখির সুন্দর চেহারা এবং মিষ্টি কলকাকলি পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলে জাতীয় পাখি দোয়েল।
পৌর এলাকায় বাড়ি শিক্ষক এইচ এম খালেদুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হয়ে যেতো আমাদের কর্মব্যস্ততা। কিন্তু দিন দিন পাখির ডাক হারিয়ে যাচ্ছে, এখন গাছ-গাছালিতে আর পাখির ডাক নেই। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই।’
গ্রামের প্রবীণদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশের ঝাড়, আমের বাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত, ওই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর চোখে পড়ে না। অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাঁচায় বন্দি করে কয়েক প্রজাতির পাখি পালন করতে দেখা যায়।
তারা আরও জানান, নতুন প্রজন্ম পাখি দেখতে পায় না, তারা তো অনেক পাখি চেনেই না। তাছাড়া শিকারিদের দৌরাত্ম্যে পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার প্রভাব, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়, পাখি শিকার, পাখির মাংশের ব্যবসা ইত্যাদি কারণে অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন সমাজের সচেতন মানুষরা।
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক আহাদ মিয়া বলেন,‘পাখি শিকার সহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে দোয়েল পাখি বর্তমানে সচরাচর চোখে পড়ে না, বর্তমানে অনেকটা প্রায় বিলুপ্তের পর্যায়, পাখি শিকার ও ছোট খাল বিল নদী নালা ভরাট বন্ধ করা সহ সামাজিক ভাবে মানুষকে সচেতন করতে পারলে দোয়েল পাখি সহ সকল পশুপাখি প্রজনন বাড়বে। পাখি শিকার বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা সচেতন মহলের।’
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মানজুর আহমদ আজাদ মান্না বলেন,‘পাখির সুরক্ষায় দেশে আইন তো আছে। আমরা চাই সেই আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হোক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের উচিত আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ জোরদার করা, সরকারি-বেসরকারিভাবে পক্ষীকূল সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’