অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার সাবেক আইনমমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান
দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে হকার শাহজাহান আলী (২৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বুধবার (১৪ই আগস্ট) সন্ধ্যায় বিপুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
রিমান্ড আবেদনের সময় আসামিপক্ষে আদালতে শুনানি করার মতো কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত সূত্রে জানা যায়, তাদের পক্ষে শুনানি করতে কোনো আইনজীবী রাজি হননি। মামলার বাদীপক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাদেরকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয়। এসময় আইনজীবীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন, মামলার তদন্তের স্বর্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি বলেন, আদালতে কয়েক হাজার আইনজীবী ছিলেন তারা ন্যায় বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। তিনি আরও জানান, আদালতে মামলার বাদী উপস্থিত ছিলেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আদালতে বলেন, এরা আমার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। তাদের নির্দেশে আমরা ছেলেও হত্যা করা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে।
আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিচার চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বরে আইনজীবীরা মিছিল করছেন। অনেক আইনজীবীকে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। এসময় আদালতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গত ১৬ই জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী (২৬) এবং অন্যজন হকার মো. শাহজাহান (২৬)। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শাহজাহান হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
গত ১৬ই জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয়।
এ মামলার অভিযোগে আয়শা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো ১৬ই জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় একজন ব্যক্তি ছেলের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে যাই এবং জানতে পারি, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি। তখন বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, গত ১৬ই জুলাই আমার ছেলে গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ছিল।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা আমার ছেলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে; ফলে আমার ছেলে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। উপস্থিত পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ১৬ই জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করেন।