1. mumin.2780@gmail.com : admin : Muminul Islam
  2. Amenulislam41@gmail.com : Amenul :
  3. smking63568@gmail.com : S.M Alamgir Hossain : S.M Alamgir Hossain
কমলগঞ্জের ভানুবিলে কৃষক প্রজা আন্দোলন - আলোরদেশ২৪

কমলগঞ্জের ভানুবিলে কৃষক প্রজা আন্দোলন

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ১০৮ বার দেখা হয়েছে

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি::

কমলগঞ্জে স্মার্ট ভূমিসেবা সপ্তাহের শুভ উদ্বোধন

পৃথিমপাশা নবাব বাড়ী বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। ইহার অবস্থান মৌলভীবাজার জেলা সদর হতে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পূর্বে। জমিদার বাড়িটি প্রায় ২৫ একর জমির ওপর অবস্থিত। জমিদার বাড়ির কারুকার্যময় আসবাবপত্র, মসজিদের ফুলেল নকশা, ইমামবাড়া ও সুবিশাল দীঘি যে কাউকেই আকৃষ্ট করে। জমিদারগণ শিয়া সম্প্রদায়ভূক্ত হওয়ায় এখানে প্রতি বছর জাঁকজমকভাবে আশুরা পালিত হয়।

পৃথিমপাশা নবাব বাড়ীতে অনেক নামি—দামি মানুষের আগমণ ঘটেছে। ব্রিটিশ সরকারের গর্ভনর জেনারেল নর্থ ব্রুক, ত্রিপুরার মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর, ইরানের সম্রাট রেজা শাহ পাহলভী, পাকিস্তানের পেসিডেণ্ট ফীল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ প্রমূখ নেত্রীবৃন্দ পৃথিমপাশা নবাব বাড়ীতে এসে ছিলেন।

জমিদারির ইতিবৃত্ত :
মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে শিয়া মতাবলম্বী সাকি সালামত খান ইরান থেকে ভারতবর্ষ আসেন। তাঁর ছেলে ইসমাইল খান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পৃথিমপাশায় আসেন এবং বসতি স্থাপন করেন। তাঁর নামে এখানে একটি দিঘি র‍য়েছে। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খান এবং শামসুদ্দিন খানের ছেলে রবি খান এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। রবি খানের নামানুসারে এখানে “রবির বাজার” নামে একটি হাট রয়েছে।
রবি খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী খান সিলেটে ইংরেজ নিয়োজিত কাজী ছিলেন। সেই সময় পাহাড় বেষ্টিত এই অঞ্চলটিতে নওগা কুকি উপজাতির বেশ উপদ্রব ছিল। তারা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কোন আইনই মানতোনা।

১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে নাগা ও কুকিরা বিদ্রোহ করলে ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহ দমনে মোহাম্মদ আলী খান সাহেবের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। তিনি বিদ্রোহ দমনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। মোহাম্মদ আলী খানের পুত্র গৌছ আলী খান পিতাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। ইংরেজ সরকার এতে খুশি হয়ে মোহাম্মদ আলী খানকে ১২০০ হাল বা ১৪ হাজার ৪০০ বিঘা নিষ্কর জমি দান করে পৃত্থিমপাশার জমিদারির পত্তন ঘটান।

মোহাম্মদ আলী খানের পুত্র গৌছ আলী খান এবং গৌছ আলী খানের পুত্র আলী আহমদ খান উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির মালিক হন। আলী আহমদ খানের সময়কালে জমিদারি আয় ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তিনি ব্রিটিশ সরকারের আনুকুল্য লাভ করেন। তিনি প্রজাদের কল্যাণে অনেক জনহিতকর কাজ করেন। তাঁর সময় সিলেটে সুরমা নদীর তীরে বিশাল একটি ঘাট ‘চাঁদনীঘাট’ নির্মিত হয়। তিনি সিলেটকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের চেষ্টা করেন। আলী আহমদ খান অনেক রাস্তা, মসজিদ, মাদ্রাসা, দীঘি ও পুকুর খনন করেন। তিনি ১৮৭৪ সালে গর্ভনর জেনারেল নর্থ ব্রুক এর সিলেটে আগমন উপলক্ষে সিলেট শহরকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে কিন ব্রিজের ডান পার্শে সুরমা নদীর তীরে তার ছেলে আলী আমজদ খানের নামে একটি ক্লক টাওয়ার বা ঘড়ি ঘর নির্মান করেন।

আলী আহমদ খানের পুত্র নবাব আলী আমজদ খান ১৮৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর জমিদারিকে সিলেটের সবচেয়ে স্বনামধন্য এবং বড় জমিদারিতে রূপান্তর ঘটান এবং নিজেকে একজন সমাজসেবী, পরোপকারী এবং প্রজাহিতৈষী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। শিক্ষানুরাগী এ জমিদার ১৯০৫ সালে মৌলভীবাজার আলী আমজদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পৃথিমপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জনকল্যাণমুখী কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নবাব খেতাবে ভূষিত করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যে তাঁর সুনাম ও সুখ্যাতি সমগ্র বাংলা এবং আসামে ছড়িয়ে পরে। তাঁর গৃহীত ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমান অর্থের সংস্থান করতে রাজস্ব কর্মচারীদের উপর চাপ আসে। আর এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কতিপয় দূর্নীতিগ্রস্থ, অসৎ কর্মচারী। তারা কোন কোন মৌজায় প্রজা নিপীড়ন এবং প্রতারণা শুরু করেন। যার পরিণতি হয়েছিল খুবই ভয়াবহ।

যাই হোক, তিনি মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১৯০৫ সালের শেষের দিকে ইন্তেকাল করেন। নবাব আলী আমজদ খানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবাব আলী হায়দর খান জমিদারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নবাব আলী হায়দার খান নিখিল ভারত মুসলিম লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে আসাম প্রাদেশি সরকারে আসাম বাংলার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ স্যার সৈয়দ সাদ উল্লাহর মন্ত্রিসভায় কৃষি মন্ত্রী ছিলেন।

১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত আসামের গোপীনাথ বরদলৈর মন্ত্রিসভার বিদ্যুৎ ও পানি উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। তবে নবাব আলী হায়দর খানের আমলে তাঁর কোন কোন জমিদারি মৌজায় অসৎ কর্মচারীদের প্রজা নিপিড়ন চুড়ান্ত আকার ধারণ করে। ফলে ১৯৩২ সালে ভানুবিল মৌজায় কৃষক প্রজা বিদ্রোহ ঘটে, যা ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে।

নবাব আলী হায়দর খানের দুই পুত্র ছিলেন। তাঁরা হলেন নবাব আলী সফদর খান (রাজা সাহেব) ও নবাব আলী সারওয়ার খান (চুন্নু নবাব)। নবাব আলী সফদর খান বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন এবং তিনি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অত্যান্ত বিশস্ত ব্যক্তি ছিলেন। আরেক ভাই নবাব আলী সারওয়ার খান আওয়ামী লীগ করতেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন এবং ১৯৭৩ সালে উপনির্বাচনে কুলাউড়া আসনে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন।

নবাব আলী সফদর খানের সন্তান নওয়াব আলী আব্বাছ খান ১৯৫৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পৃথিমপাশা নবাব বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। নওয়াব আলী আব্বাছ খান আইন শাস্ত্রে পড়ালেখা শেষ করে আইন পেশায় কর্মরত থাকার পাশাপাশি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মৌলভীবাজার—২ কুলাউড়া আসনে ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বেশির ভাগ সময়ই এলাকায় থেকে পৃথিমপাশা এস্টেটের মোতাওয়াল্লি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেয়ার..

আরো সংবাদ পড়ুন...
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | আলোর দেশ ২৪ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Developed By Radwan Ahmed