অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
কমলগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর ঘাতক স্বামী থানায় আত্মসমর্পন
উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রেক্ষাপটে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করে সুনাম কুড়াতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। তবে এমন চাওয়ার সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে নিজ দলেরই সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তারা নির্বাচনী প্রার্থী হওয়া তাদের স্বজন ও অনুসারীদের যেকোনো মূল্যে জয়ী করতে ভোটের মাঠে মরিয়া। আওয়ামী লীগের কোনো এমপিই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, এমপিদের ধমকে বিভিন্ন এলাকায় ভোটাররাও রয়েছেন আতঙ্কে।
এমনই চিত্র দেখা গেছে সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের এলাকা চুয়াডাঙ্গায়। এই এমপি তার ভাইকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী করে নির্বাচনে জোরালো প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এসএএম জাকারিয়া আলম।
তিনি নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন। অভিযোগপত্রে ওই প্রার্থী লিখেছেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলী মুনসুর বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা বলে বেড়াচ্ছেন, “ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, প্রিসাইডিং অফিসার আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা ত্রিশ হাজার ভোট আগে বুঝ করে রাখব এবং পোলিং এজেন্ট বের করে দেব। কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে দেব না”।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এমন চিত্র শুধু দামুড়হুদার নয়, আরও বহু উপজেলায় ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা।
দলীয় প্রতীকবিহীন এবারের উপজেলা নির্বাচন যেন আওয়ামী লীগ বনাম দলটির এমপিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভোট হয়ে উঠেছে। প্রভাবমুক্ত উপজেলা ভোট উপহার দিতে আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও অনিশ্চয়তা দেখছেন দলটির এমপিদের বলয়ের বাইরের বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা। তারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে নানা পথ অনুসরণ করেও উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের আধিপত্য কমানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।
এবারের ভোটের মাঠের এমন চিত্রের মধ্য দিয়েই আগামীকাল বুধবার ষষ্ঠ বারের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। যেখানে নিজ দলের এমপিদের কাছে আওয়ামী লীগ করা প্রার্থীরা বিরোধী দলের মতো আচরণের শিকার হচ্ছেন। এমপি বলয়ের লোকজনের নিয়মিত হুমকি-ধমকির মুখে থাকতে হচ্ছে বলয়ের বাইরের প্রার্থীদের।
এবিষয়ে যদিও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, যেখানে প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করা হবে, সহিংসতার ঘটনা ঘটবে, সেখানেই নির্বাচন স্থগিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে এরই মধ্যে অবহিত করা হয়েছে। এমপিরা যতই প্রভাব দেখাতে চান কেন্দ্র থেকে ততটাই প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা বলেন যে, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে। যেসব এমপি প্রভাব বিস্তার করবেন তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। যেসব এলাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, কেন্দ্র থেকে কথা বলা হচ্ছে।’
এদিকে এমপিদের স্বজন ও অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া দলীয় নেতাদের লিখিত অভিযোগের স্তূপ জমেছে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
এসবের মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অভিযোগ বেশি ও গুরুতর। এ কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন বলেন যে, জমা পড়া অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে নানা বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন যে, ‘ঘটনা ঘটবেই। কেন্দ্রের নির্দেশনা কোনো এমপি মানবেন বলে মনে হচ্ছে না। পরিবার, পরিজন ও স্বজনদের ভোট না করার সিদ্ধান্ত যেমন মানেননি, প্রভাবমুক্ত ভোট করার নির্দেশনাও এমপিরা মানবেন না। প্রত্যেক এমপিই নিজেকে এলাকার রাজা মনে করেন।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কোনো উন্নয়নকাজের ডিও লেটার না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি। তিনি কবিরহাট উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এ উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী তার ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী।
চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এমএ কুদ্দুস। তিনি বলেছেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনী এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে মোহাম্মদ মানিকের (ঘোড়া প্রতীক) পক্ষ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অর্থ লেনদেন করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে দলের এমপিদের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন যে, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাবমুক্ত হবে। প্রভাব দেখিয়ে যারা জিততে চাইবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কটুর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ছবি ও তথ্য সংগ্রহ।