কমলগঞ্জ প্রতিনিধি::
টাঙ্গাইলে ঘুমন্ত স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে নিলো স্ত্রী
লাউয়াছড়া জায়গাটি প্রাণ-প্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষিত। অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর বাস এখানে। বন্য প্রাণীরা এখানে নির্বিঘ্নে বিচরণ করবে, বাড়বে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, কোন কোলাহল–হইচই থাকবে না। বনের নির্জনতা ভাঙবে শুধু পাখি, ঝিঁঝিপোকা, উল্লুকের ডাকে। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। মানুষের ভিড়–হইচইয়ে বন্য প্রাণীরা এখানে দিশাহারা। ঈদুল ফিতরের ছুটি ও পহেলা বৈশাখ এ ৫ দিনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও উদ্যানসংলগ্ন স্থানে অন্তত ১৫-১৬ হাজার মানুষ ভিড় করেছিল। ৫ দিনে শুধু টিকিট কেটেই উদ্যানে প্রবেশ করেছেন ৯ জন বিদেশী পর্যটকসহ ১২ হাজার ৫৫৮ জন।
১১ই এপ্রিল প্রবেশ করেছেন ৩ হাজার ৩৬ জন, ১২ই এপ্রিল ২ হাজার ৪শত ৬১ জন, ১৩ই এপ্রিল ৩ হাজার ৩শত ৩৪ জন, ১৪ই এপ্রিল ২ হাজার ৩শত ৬০ জন এবং ১৫ই এপ্রিল ১হাজার ৩শত ৬৭ জন। এই ৫ দিনে গাড়ী পার্কিং ফি সহ মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৫শত ৬ টাকা। টিকিটের হার হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ টাকা, ছাত্র ২০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক ৫শত টাকা।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটি, পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ঢল নামে। পর্যটকেরা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে বনের ভেতরে ছুটে বেড়ান যে যার মতো হইহুল্লোড়, চিৎকার-চেচামেচি করেন। জিপগাড়ি (চাঁন্দের গাড়ী) পিকআপ ভ্যানে ও মোটরসাইকেল হুল্লোড় করে ছুটে বেড়ান সড়কে। উদ্যান ও উদ্যানসংলগ্ন এলাকাজুড়ে উন্মুক্ত মেলার পরিবেশ তৈরি হয়, যাতে সংরক্ষিত বনের নিরিবিলি পরিবেশের পুরোটাই ভেঙে পড়ে। এতে আতঙ্কিত বন্য প্রাণী দিশাহারা হয়ে গভীর বনের মধ্যে কোনোরকমে আত্মগোপন করে থাকে। এ ছাড়া পর্যটকেরা ইচ্ছেমতো বনের বিভিন্ন স্থানে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী ফেলে পরিবেশ দূষিত করেন।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ১৯৯৬ সালে সরকার লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। উদ্যানটি ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ভোর থেকে উল্লুকসহ বিভিন্ন প্রাণী ডাকাডাকি, ছোটাছুটি শুরু করে। কিন্তু এই কয়েকদিনে মানুষের ভিড়ে দিনে বন্য প্রাণীর তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা বনের গভীরে নিশ্চুপ হয়ে ছিল। সহব্যবস্থাপনা কমিটির লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের নবনির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ জনক দেববর্মা বলেন, এই কয়েকদিন মনিটরিং টিমের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রচুর মানুষ এসেছে লাউয়াছড়ায় ইকো ট্যুরিজম হওয়ার কথা, মাস ট্যুরিজম হয়ে গেছে। একদিকে বন্য প্রাণীরা ভয়ে থাকে, অন্যদিকে গাছের ডালপালা ছেঁড়া হয়। বনের অনেক ক্ষতি হয়। এটা বন ও বন্য প্রাণীর জন্য মঙ্গলজনক নয়।
পরিবেশকর্মী ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইকো ট্যুর গাইড মো: আহাদ মিয়া বলেন, এই কয়েক দিন বনের পরিবেশ খুবই খারাপ ছিল। পর্যটকের ভিড়ে বন্য প্রাণীদের দেখা পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য। তিনি বলেন যে, বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক আসেন। এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা নির্জনতার স্বাদটিও পাননি। মাঝেমধ্যে এত চিল্লাচিল্লি শুরু করেন, এতে বন্য প্রাণীরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কালেক্টর শাহীন মাহমুদ বলেন, ঈদের দিন থেকে সোমবার (১৫এপ্রিল) গত ৫ দিনে ঈদ ও পহেলা বৈশাখে ছুটি থাকায় প্রচুর পর্যটক এসেছিল। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করতে হয়েছে। এতে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে বন্য প্রাণীরা মানুষ দেখলে ভেতরে চলে যায়। প্রচুর ভিড় ছিল।
কমলগঞ্জ জীব বৈচিত্র কমিটির সভাপতি মানজুর আহমেদ আজাদ মান্না বলেন যে, ‘লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের মূল আকর্ষণ থাকে বনের ভেতর হেঁটে হেঁটে প্রকৃতি দেখা। এরপর আদিবাসী খাসিয়া পুঞ্জিতে ঘুরে বেড়ানো। পর্যটকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে খাসিয়া পুঞ্জিসহ বনের ভেতর ঘুরে বেড়ান। তবে এ কয় দিন অসংখ্য পর্যটক উদ্যানের মধ্যে প্রবেশ করেছেন। বনের ভেতরের পরিবেশ-পরিস্থিতিই অন্য রকম ছিল, হই-হুল্লোড় ছিল। বনের প্রাণীরা নীরব হয়ে গেছে। পর্যটকদের জন্য বন্য প্রাণীর দেখা পাওয়া দুষ্কর ছিল। তবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকে গাইড নিয়ে ট্রেইলে (ঘুরে দেখার পথ) প্রবেশ করেন না। বনের কোনো নির্দেশনা অনেকেই মেনে চলেন না।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, ‘এই কদিন খুব চাপ গেছে। দর্শনার্থী চলে এলে না করা যায় না। অনেক দূর থেকে অনেকে আসে। তারা তো ফিরে যেতে পারে না। দর্শনার্থী সীমিত করতে পারলে ভালো হতো। প্রতিদিন কতজন দর্শনার্থী ঢুকতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা করলে লোকজন আগেই জানতে পারবে ঢুকতে পারবে কি না। সেভাবে আসবে। তিনি বলেন, এক দিনে উদ্যানে কতজন পর্যটক সহনীয় এ নিয়ে কোনো জরিপ নাই। এক হাজারের জায়গায় তিন হাজার চলে আসছে।