অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
দেশে বিএনপি সবচেয়ে বড় উগ্রবাদী বললেন: ওবায়দুল কাদের
ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ৩০৫ বর্গকিলোমিটার। এই সীমানায় বসবাস করেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। বিপুলসংখ্যক এই মানুষের মধ্যে প্রতিদিনই পৃথিবী ছাড়েন একাধিক ব্যক্তি। সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের দাফন হয় নির্ধারিত কবরস্থানে।
অঞ্চলভেদে রাজধানী ঢাকায় একটি কবরের দাম সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা। মাসিক হিসেবে ধরলে ভাড়া গুনতে হয় প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা। দেড় কোটি টাকার এই কবর আগে বিক্রি হতো ৪৫ লাখ টাকায়। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। তবে শুধু টাকা থাকলেই পাওয়া যাবে না এই কবর। লাগবে উচ্চপর্যায়ের তদবিরও। মাসে ৫০ হাজার টাকা হারে কবর ভাড়া করলেও শেষ পর্যন্ত একই কবরে দাফন করা হবে অন্য কাউকে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বনানী কবরস্থান চালু হয় ১৯৭৩ সালে। ১০ একর আয়তনের কবরস্থানটিতে ২২ হাজার কবর রয়েছে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এখানে কাউকে কবর দিতে গেলে ১৫ লাখ টাকা খরচ হতো। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কবরস্থানের জায়গা সংরক্ষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল উত্তর সিটি করপোরেশন। ২০০৮ সাল থেকে পুনরায় বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণ শুরু করে ডিএনসিসি।
জানা যায় যে, কবর সংরক্ষণের নিয়ম চালু করার পর থেকে ১৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ ফি ছিল ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু গত বছর সেটা বাড়িয়ে করা হয় ১ কোটি টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য ৪৫ লাখ থেকে এক লাফে বাড়িয়ে করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা, যা মাসিক ভাড়া হিসেবে ধরলে প্রতি মাসে দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে উত্তরা ৪নং সেক্টরে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণের জন্য ফি ছিল মাত্র ৬ লাখ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য করা হয়েছে ১ কোটি টাকা। উত্তরা ৬নং সেক্টরে ১৫ বছরের কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ টাকা, এখন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখে। আর ২৫ বছরের জন্য ১১ লাখ টাকা থাকলেও এখন গুনতে হবে ৭৫ লাখ টাকা।
মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য ছিল ৬ লাখ টাকা, এখন তার জন্য দিতে হয় ২০ লাখ টাকা। ২৫ বছরের জন্য এই কবরস্থানে আগে ছিল ১১ লাখ টাকা, বর্তমানে তার জন্য খরচ করতে হবে ৩০ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও রায়েরবাজার কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ টাকা এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য ১১ লাখ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধনাঢ্য পরিবারের কেউ মারা গেলে প্রিয়জনের কবর সংরক্ষণ করতে চান অনেকে। যার ফলে আর কোনো জায়গা থাকছে না কবরস্থানে। তাই কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যদিও সংরক্ষণ করা এই কবরে পুনরায় কবর দিতে গেলে কবরস্থান ভেদে দিতে হয় নতুন ফি।
বনানীতে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা। মিরপুরে ৩০ হাজার টাকা। কবর সংরক্ষণ ফি আকাশছোঁয়া হলেও বনানী কবরস্থানে জায়গা পেতে লাগে উচ্চ পর্যায়ের তদবির। যে কারণে দ্বারস্থ হতে হয় মিরপুর কিংবা রায়েরবাজারের শেষ ঠিকানায়। দাফন শেষ হলেও ভোগান্তি কাটে না স্বজনদের। কবর দেখভাল করা, পানি দেওয়ার জন্যও দিতে হয় টাকা। না হয় অযত্ন অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রিয়জনের শেষ চিহ্নটুকু।
তবে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শামসুল আরেফিন নামে এক ব্যক্তি কালবেলাকে বলেন, নিয়মিত সরকারি ফিয়ে দিয়ে আসছি। তাতে কোনো প্রকার যত্ন নেওয়া হয় না কবরের। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মাসে মাসে টাকা দেই কবর দেখভালসহ পানি দেওয়ার জন্য।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, কবরস্থানে দেখভাল করতে সরকারিভাবে জনবল রয়েছে ৪ থেকে ৬ জন। অথচ কবরস্থান ভেদে জনবল থাকার কথা ২০ থেকে ২৬ জন। যে কারণে ব্যক্তিউদ্যোগে পরিশ্রমের বিনিময়ে গোরখোদক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতায় কাজ করে অনেকে।
জনবল কম থাকাকে দায়ী করে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার সানোয়ার হোসেন বলেন যে, আমাদের এখানে খুব কম লোকবল। বাইরের লোকজনই কবর খননসহ দেখাশোনার কাজ করেন। গোরখোদকদের খুশি হয়ে যা দেয়, তারা তা নেয়। তবে বাঁশ ও চাটাইরে জন্য ১৭০০ টাকা নেওয়া হয়।
ছবি ও তথ্য সংগ্রহ।