অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) থেকে পুলিশি পাহারায় বের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ই আগস্ট) দিনগত রাত ৩টা থেকে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
আজ দুপুর ২ঘটিকার সময় পিরোজপুরে তার প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে তার মরদেহ ঢাকায় আনা না হলে আগামীকাল ১৬ আগস্ট বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম মসজিদে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন যে, ঢাকায় সাঈদীর জানাজার নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে রাতভর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সটি আটকে রাখেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সাঈদীর মরদেহবাহী ফ্রিজিং গাড়ি হাসপাতাল থেকে বের করতে ভক্তরা এবং জামায়াতের কর্মীরা বাধা দেন।
এ সময় নেতাকর্মীরা দাবি করেন বলেন যে, রাজধানীতে যেন তার একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেটি দিনের বেলায়। লাশবাহী গাড়ি বের করতে না দিলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
জামায়াতের নেতাকর্মীরা গাড়ির চাকা পাংচার করে দেন এবং গাড়ির গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে পুলিশ শাহবাগ মোড় থেকে গাড়ি বদল করে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তাদের সিনিয়র নেতা ও সাঈদীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রশাসনের কথা হয়েছে, হযরত মাও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কফিন আজ পিরোজপুর নেওয়া হবে।
আগামীকাল ১৬ই আগস্ট বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে সাঈদীর জানাজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আজ দুপুর ২ঘটিকার সময় পিরোজপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুসংবাদ শুনে গত রাতে বিএসএমএমইউয়ে ভিড় করেন তাঁর স্বজন ও দলের নেতাকর্মীরা। রাত ৯টার দিকে দুই ছেলে এবং তাঁদের স্ত্রীরা হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে সঈদীর মরদেহ কখন বুঝে নেবেন সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় দলের নেতাকর্মীরা হালকা বিক্ষোভ করেন।
তাদের সু-শৃঙ্খল রাখতে হাসপাতালের সামনে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী।
কারা সূত্র জানায় যে, গত রবিবার বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সাঈদী। পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুল্যান্সে করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯শে জুন গ্রেপ্তার হন সাঈদী। পরে ২রা আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগ ছিল সাঈদীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
হযরত মাও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। তিনি পিরোজপুর থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাঈদীর চার ছেলে। তারা হলেন রফিক সাঈদী (মরহুম), শামীম সাঈদী, মাসুদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।