অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
সেনাপ্রধান আজিজের সাথে জাতিসংঘের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বৈঠক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাঝেরগাঁও গ্রামের রাধাবতী দেবী কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন। যদিও মণিপুরি শাড়ির শিল্পী হিসেবে তার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। গত ১৮ই জুলাই কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়ে আবারও আলোচনায় রাধাবতী দেবী।
কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি তৈরির প্রথম কারিগর রাধাবতী দেবী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে শাড়ি উপহার দিয়ে গত মঙ্গলবার (১৮ই জুলাই) রাতেই বাড়ি ফিরেন। এরপর গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত নিয়ে রাধাবতী দেবী বলেন যে, আমি কখনো ভাবতে পারিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করব। কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) রইস আল রেজওয়ান আমাকে ফোন করে জানান যে, মঙ্গলবার আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমি দ্রুত ঢাকায় চলে আসি, সেখানে বান্দরবনের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমি ও অন্য তাতীরাও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা হয় মঙ্গলবার বিকেল ৩ ঘটিকার সময়। তিনি খুব ব্যস্ত, তারপরও আমাকে সময় দিয়েছেন, আমার সঙ্গে ছবিও তুলেছেন, কথাও বলেছেন কিছু সময়। প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে আমাকে ১ লাখ টাকা উপহার দিয়েছেন, আমার সঙ্গে থাকা অন্যদেরও প্রধানমন্ত্রী সম্মাননা দিয়েছেন। বাংলাদেশে এই প্রথম কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করায় তিনি অনেক খুশি হয়েছেন এবং তিনি বলেছেন সবসময় সহযোগিতাও করবেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সবুজ মণিপুরি জনগোষ্ঠীর গ্রাম ভানুবিল মাঝের গাঁও। পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে ১৯৭৫ইং সাল থেকে রাধাবতী দেবী মণিপুরি তাঁতবস্ত্র তৈরি করছেন। মাফলার, ওড়না, শাড়ি, গামছা, থ্রিপিচ তৈরি করতেন তিনি । নকশায় তার দখল অনেক। ২০২০ইং সালে তাঁতজাত বস্ত্রের শ্রেষ্ঠ নকশাকার হিসেবে তাকে ‘নকশাকার গুরুমাতা’ উপাধি দেয় বাংলাদেশ মণিপুরি আদিবাসী ফোরাম।
রাধাবতী দেবী তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে থাকেন। তার ছোট ভাই মাধ্যমকি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রঞ্জীত সিংহ। পরিবারে তিনিসহ ১০ জন সদস্য। রাধাবতী তাঁতবস্ত্র তৈরি করে সংসার চালাতে ভাইকে সহায়তা করেন। তিনি আদমপুরে তেতইগাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন।
তাঁত শিল্পী বাধাবতী বাড়িতেই টকটকিতে (বড় তাঁত) মণিপুরি বস্ত্র বুনন করেন। তাঁতবস্ত্র তৈরিতে ১৯৮৬ইং সালে প্রথম ভারতের মণিপুরের ইম্পলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। এরপর কমলগঞ্জের মাধবপুরে মণিপুরি ললিত কলা একাডেমিতে ২০১০ইং সালে ২ বার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
সেই থেকে তিনি এখন মণিপুরি তাঁতবস্ত্র বুননে এলাকায় একজন ওস্তাদ। সেই সূত্র ধরে বান্দরবন জেলার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। কয়েক মাস আগে খোঁজ করে তাকে নিয়ে যান বান্দরবনে। তাকে দেখানো হয় কলাগাছের আশের সুতায় তৈরি ব্যাগ, জুতা, পাপোস, ফুলদানি, ফাইল কভার, কলমদানিসহ হস্তশিল্প সামগ্রী। বলা হয় কলাগাছের সুতা দিয়ে একটি শাড়ি বুনন করে দিতে।
রাধাবতী দেবী বলেন যে, প্রথমে সামান্য চিন্তায় পড়ে গেলেও এ সুতায় অন্যান্য হস্তশিল্প বুনন সম্ভব হলে শাড়ি কেন সম্ভব নয়। এ প্রশ্ন নিজের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করায় মনের জোরে ও সাহসে তিনি রাজি হয়ে কলাগাছের কিছু সুতা সঙ্গে নিয়ে আসেন। কমলগঞ্জের নিজ বাড়িতে তাঁত সুতার সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে একটি ওড়না বুনন করলেন। এরপর বাড়ির তাঁত সঙ্গে নিয়ে বান্দরবন গিয়ে শুরু করেন শাড়ি বুনন। এক কেজি কলার সুতার সঙ্গে তাঁত সুতার সংমিশ্রণ করে টানা ১৫ দিনে কলার সুতার শাড়ি বুনন চমকে দিলেন সবাইকে। বান্দরবন জেলার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিও এ উদ্যোগে সফল হলেন বলে রাধাবতী দেবী মনে করেন।
রাধাবতী দেবী আরও বলেন যে, সেখানে কলাগাছের আঁশের সুতার সরবরাহ প্রচুর বলে সেখানকার ত্রিপুরী তরুন তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কলার সুতা দিয়ে ব্যাগ, জুতা, পাপোস, ফুলদানি, ফাইল কভার, কলমদানিসহ হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে এবং এগুলো বিদেশেও রপ্তানি করছে।
রাধাবতী দেবী এক সময় সিলেট অবস্থান করায় সেখানে মীরা বাজার এলাকায় সমবায় অফিসের তাঁতবস্ত্র বুনেনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন নিজ এলাকার অনেক মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বস্ত্র বুনন উদ্যোক্তা বানিয়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁতবস্ত্র মেলায় তিনি মণিপুরি তাঁতবস্ত্র উপস্থাপনও করেছিলেন।
কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে কলাবতী।কলাবতী শাড়ি শিল্প নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, সরকারি সহায়তায় কলাগাছের সুতায় শাড়ি বুনন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করার ইচ্ছে আছে। এতে এলাকার, দেশের ও সবার লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দেশে কলার সুতার শাড়ি তৈরির একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলেন জানান তিনি আমাদেরকে জানান।