অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
ইসলামি আন্দোলন দুই সিটির নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও কর্মসূচি ঘোষণা
মগড়া নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মগড়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৬৫।
এ নদী নেত্রকোণাকে ঘিরে রেখেছে।ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মগড়ার উৎপত্তি। সেনেরচর নামক স্থান থেকে খড়িয়া নদী বেয়ে সারাসরি মগড়া নদীর প্রবাহ। সে প্রবাহ ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বুড়বুড়িয়া বিলে এসে পতিত হয়েছে। বুড়বুড়িয়া বিল থেকে বেরিয়ে গজারিয়া ও রাংসা নদীর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফুলপুরের ঢাকুয়া নামক স্থানের ভেতর দিয়ে সরাসরি পূর্বদিকে ধলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদরের ভেতর দিয়ে ত্রিমোহনী নামক স্থানে এসে দক্ষিণেপ্রবাহিত হয়েছে।
ত্রিমোহনীতে এসে ধলাইয়ের সঙ্গে উত্তর দিক থেকে এসে লাউয়ারী নদী মিলিত হয়েছে। সে স্থান থেকে মগড়া নামে পরিচিত। সেখান থেকে প্রথমে পাঁচ মাইল পর্যন্ত দক্ষিণেদিকে প্রবাহিত হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাট থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে আকাঁবাকা হয়ে নেত্রকোণা শহরের পাশ দিয়ে আটপাড়া উপজেলার দিকে চলে গেছে।
পশ্চিম দিক থেকে শ্যামগঞ্জ হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাটের কাছে মগড়ার সঙ্গে ধলাই নামের একটি স্রোতধারা মিলিত হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলার ঠাকুরাকোণা থেকে কংস নদী একটি শাখা নদী আটপাড়ায় মগড়ার মিলিত হয়েছে। গৌরীপুর দিক থেকে ছুটে আসা পাটকুড়া নদীটি বসুর বাজার এলাকায় এসে মগড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সাউডুলি, মগড়া ও পাটকুড়ার মিলিত স্রোতেকেন্দুয়ার গুগবাজার কাছে এসে যোগ হয়েছে। সেখানে বর্ষায় স্রোতেপ্রবাহ আনুপাতিক হারে বেশি থাকে। গুগবাজার হয়ে সে নদীটি মদন হয়ে ধনু নদীতে পতিত হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলায় মগড়া নদীর গতিপথ সব চেয়ে বেশি। এ নদীটি কোথাও ধলাই নামে কোথাও মগড়া নামে খ্যাত। এ জেলার চারশ বর্গ মাইল এলাকা দিয়ে মগড়া নদীর প্রবাহ রয়েছে।
মগড়া কংস নদী ৮/১০ মাইল ব্যবধানে প্রায় ৪০ মাইল সমান্তরায় ভাবে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
এই হচ্ছে মগড়া নদীর প্রবাহধারা।এই মগড়ার অববাহিকায় গড়ে উঠা জনপদ অনেকাংশেই এই মগড়া নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই মগড়া নদী।এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাট বাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে নেত্রকোণা শহরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত এই নদীকে কেন্দ্র করে। সারাবছর চলাচল করত ছোট বড় অসংখ্য নৌকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেত্রকোণার উৎপাদিত ধান, পাট, আখ,মাছ,কাঠ সহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করা হত এই মগড়া দিয়ে।এই নদীকে কেন্দ্র করে দুই তীরে অসংখ্য মৎসজীবী পল্লী গড়ে উঠে যারা এই নদী থেকে মাছ আহরন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।মগড়া নদীর পানি দিয়ে এর তীরবর্তী অঞ্চলের ফসলি জমি চাষ করা হত।এই অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল এই মগড়া নদীর পানি। এই নদীর গুরুত্ব ও সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছেন দেশ বিদেশের অনেক জ্ঞানী গুণী ও বিশিষ্টজনেরা। এক কথায় এই মগড়া নদী মায়ের উষ্ণতায় জড়িয়ে রেখেছে নেত্রকোণা জনপদকে।নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দিয়েছে তার তীরবর্তী সন্তানদের।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় নেত্রকোণার এই নদীটি আজ বিলুপ্তির পথে।নগরায়নের প্রভাব, দখল, দূষণ আর পলিমাটির আস্তরণ পরে নদীটির তলদেশ যেমন ভরাট হয়ে যাচ্ছে দখলের কারনে সংকুচিত হয়েগেছে এর প্রশস্ততা।
এই নদীতে অপরিকল্পিত ভাবে ব্রিজ নির্মাণের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে নৌকা চলাচল নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে বর্ষা কিংবা শুষ্ক কোন মৌসুমেই চালু করা যায় না নৌপথ ।
মগড়া নদীটি দখল করে এর উপর কোথাও গড়ে উঠছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা কোথাও আবার চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফসল। এক সময়কার খরস্রোতা মগড়া কোথাও খাল আবার কোথাও ড্রেনে পরিনত হয়েছে। নদীতে ময়লা আবর্জনা পলিথিন, প্লাস্টিকের বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের লাইন ছেড়ে দেওয়ার ফলে নদীর পনি যেমন দূষিত হচ্ছে নতীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারনে বর্ষাকালে অল্পতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, প্লাবিত হচ্ছে নদীর দুইপাশের জনপদ, নদীতে থাকা পলিথিন প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন অপচনশীল দ্রব্য ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ার কারনে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, ফসল উৎপাদন ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এমতাবস্থায় এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি মগড়া নদীকে দখল মুক্ত করে খননের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলে নেত্রকোণা শহরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে রক্ষা হবে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য।
একদিকে মৎস্য উৎপাদন যেমন বৃদ্ধিপাবে নৌপথে পন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে এই অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্য তথা অর্থনৈতিক প্রসার ঘটবে চাপ কমবে সড়ক পরিবহনের উপর।
মগড়া নদী দখল মুক্ত করে খনন করা এখন নেত্রকোণাবাসীর সময়ের দাবী। এবিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করে নেত্রকোণার আপামর জনসাধারণ।