অনলাইন ডেস্ক নিউজ।।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার আকাশে উড়ছিল লাল-সাদা রঙের একটি বিমান। এ আকাশ যানটিতে এসময় ছিলেন মাত্র একজন যাত্রী ও পাইলট।

হঠাৎ করো পাইলটের মৃত্যু হয়! এমতা অবস্থায় যেখানে বিধ্বস্ত হওয়ার কথা, সেখানে যাত্রীসহ অক্ষত অবস্থায় বিমানটি অবতরণ করে পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

তবে অবাক করার মতো ঘটনা হলেও আদতে তা ঘটেছে।

(১০ই মে) মঙ্গলবার  দুপুরে এ ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে
(ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি)।

খবরে বলা হয় যে, একদিকে হৃদয়বিদারক ঘটনা, অন্যদিকে দারুণ একটি ঘটনা ঘটেছে ফ্লোরিডায়।

প্লেনটি সিসনা ২০৮ মডেলের রাজ্যটির আকাশে ওড়ার সময় সেটির পাইলটের মৃত্যু হয়। আকাশ যানটি বিধ্বস্ত না হয়ে ফিরে এসেছে পাম বিচ বিমানবন্দরে।

তবে সাধারণ একজন যাত্রী সেটি অবতরণ করান। যদিও এর নেপথ্যে ছিলেন ২০ বছরের অভিজ্ঞ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ফ্লাইট প্রশিক্ষক রবার্ট মরগান।

অবাক করার মতো আরেকটি বিষয় আছে এ ঘটনায়। মরগান যে প্লেনটি আকাশ থেকে নেমে আসতে সহায়তা করেছিলেন, তিনি এর আগে কখনো সিসনা ২০৮ বিমানটি চালাননি। তিনি শুধু বিমানটির ম্যাপের মাধ্যমে অনেকটা অসাধনকে সাধন করেছেন।

তবে কি ঘটেছিল সেদিন দুপুরে
বিবিসি বলছে, ওই প্লনটি (সিসনা ২০৮ মডেলের) সাধারণত ফ্লাইট প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো সময় আকাশ যানটির মাধ্যমে অল্প দূরত্বে যাত্রী আনা নেওয়াও করা হয়।
তবে ১০ই মে কি ঘটেছিল তা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিন দুপুরের দিকে হঠাৎ এয়ার রেডিওতে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- আমার বিমান বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনো ধারণা নেই। কেউ সাহায্য করতে পারবেন

তবে ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকটা পিলে চমকে যায় পাম বিচ বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সদস্যরা। নাম না জানিয়ে ওই ব্যক্তি আবার বলেন, আমি খুব গুরুতর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। পাইলট অচেতন হয়ে পড়েছেন। হয়তো তিনি মারা গেছেন!

এবিষয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সদস্যরা রেডিওতে এ বার্তা পাওয়ার সময় সিসনা ২০৮ মডেলের প্লেনটি ভূমি থেকে ৯ হাজার ফুট (২ হাজার ৭৫০ মিটার) ওপর দিয়ে উড়ছিল। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি আবার বলেন- আমার কোনো ধারণা নেই কী হতে যাচ্ছে। আমি শুধু সামনে ফ্লোরিডা উপকূল দেখতে পাচ্ছি।

এসময় বিরতিতে যাচ্ছিলেন রবার্ট মরগান। কিন্তু ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর শুনে তিনি ফ্লাইট কন্ট্রোলিংয়ে বসে পড়েন। বিমানে থাকা লোকটিকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। বলেন যে, আপনি চেষ্টা করুন যেন প্লেনের পাখা দুটো যেন সমান থাকে। উপকূল অনুসরণ করার চেষ্টা করুন, আমরা আপনাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আপনি উত্তর বা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যান।

এ প্লেনে থাকা ব্যক্তি এ সময় বলেন যে, আমিতো নেভিগেশন স্ক্রিনটি চালু করতে পারছি না। এতে কি সব তথ্য আছে? আপনারা কি জানেন। আমি জানি না কিভাবে বিমানটি থামাবো! কিভাবে কি করব আমি কিছুই জানি না।

ফ্লাইট প্রশিক্ষক মর্গান তার অন্যান্য সহকর্মীদের শান্ত ও সতর্ক থাকার কথা বলেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানের ককপিটে থাকা ম্যাপ খুঁজে দেখতে বলেন। ডব্লিইউপিবিএফ টিভিকে দেওয়া এক

সাক্ষাৎকারে মর্গান বলেন, আমি শুধু জানতাম প্লেনটি অন্যসব সাধারণ প্লেনের মতোই উড়ছে। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। আকাশে থাকা প্লেনের কন্ট্রোল যার কাছে ছিল, তাকে কিভাবে রানওয়েতে নামিয়ে আনা যায়, সেটি ভাবছিলাম।

মৃত পাইলট নিয়ে আকাশে উড়তে থাকা প্লেনটির ওই যাত্রীকে মরগান অল্প সময়ে শিখিয়েছিলেন কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে খুব ধীরে বিমানটিকে নামিয়ে আনা যায়। ধীরে ধীরে বিমানটি নেমেও আসে। মরগান বলেন যে, আমি ভাবছিলাম এরপর কী হবে। এর মধ্যেই শুনতে

পেলাম তিনি বললেন যে, ‘আমি  অবতরণ করেছি বিমানবন্দরে। তখন আমি চিন্তা করলাম কিভাবে এক জায়গায় বসে থেকে বিমানটিকে আমি থামাবো!

বিবিসির খবরে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত কোনো ক্ষতি ছাড়াই প্লেনটি অবতরণ করে। পরে মরগান ও ওই যাত্রী একে অপররের সঙ্গে দেখা করে আলিঙ্গন করেন। অন্যান্য পাইলটরা ফ্লাইট প্রশিক্ষক মরগানকে বীর বলে প্রশংসা করেন

সিএনএনের খবরে বলা হয়ে যে, নিরাপত্তার স্বার্থে প্লেনের যাত্রী, এমনকি মৃত পাইলটের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, সিসনা ২০৮ মডেলে প্লেনটি কানেকটিকাট রাজ্যের একটি ঠিকানায় ‘ব্যক্তিগত’ হিসেবে নিবন্ধিত ছিল। ফ্লাইট ট্র্যাকার সংস্থা ফ্লাইট অ্যাওয়ার জানিয়েছে, বিমানটি ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা আগে বাহামাসের মার্শ হারবার থেকে উড্ডয়ন করেছিল।