ডেস্ক নিউজ।।
প্রতিমন্ত্রীতির পর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পদও হারিয়েছেন ডাঃ মুরাদ। সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা তা নিয়ে চলছে ব্যাখা-বিশ্লেষণ। অভিযোগ পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে আইন -শৃঙ্খলা বাহিনী।
এমন পরিস্থিতিতে মা-বোনদের কাছে ক্ষমা’ চেয়েছেন সদ্য ‘পদত্যাগীকারী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ডাঃ মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) হারুনুর রশীদ বলেন যে, কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা তদন্তের জন্য মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। উনি যে ডিবির নাম ব্যবহার করেছেন, সেটা কেন করলেন সেটাও প্রয়োজনে জানার জন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি। পাশাপাশি যাদের সঙ্গে এই ধরনে ঘটনা ঘটেছে, প্রয়োজন হলে তাদেরও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে বুধবার দেশে ফিরবেন। এরপর তিনি যদি কোনো মামলা করেন, বা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো৷
এদিকে আজ সন্ধ্যায় র্যাব কার্যালয়ে ডেকে অভিনেতা মামনুন হাসান ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন যে, অডিওর বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়।” এর আগে দুপুরে ইমন নিজেই ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানাতে গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন ডাঃ মুরাদ হাসান। ই-মেইলে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপরই বিকেলে তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আজ বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে এক ‘জরুরি’ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ডাঃ মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন যে, ‘‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন। গঠনতন্ত্রে উনাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে আমরা তার চূড়ান্ত শাস্তির সুপারিশ করবো। আমি আশা করি দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাই নেবে
দল থেকে বহিস্কার করলে কী তার সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে? সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক বলেন যে, “আমাদের সংবিধানে আছে, কেউ যদি দল থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। কিন্তু দল বহিস্কার করলে তার সদস্যপদ যাবে না। আবার কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হন তাহলেও তার সংসদ সদস্য পদ যেতে পারে। আমি সব সময় কথা বলার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার বিরুদ্ধে। এটা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী। আমি যত বাজে কথাই বলি না কেন, যত অপ্রিয় কথাই হোক, এটার জন্য ডিজিটাল আইনে মামলা হচ্ছে বলেই তো আমাদের কথাবার্তা অনেক কমে গেছে। কিন্তু তিনব যে, কাজটি করেছেন, তার জন্য যার মানহানি হয়েছে, তার জন্য তিনি দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারেন। এছাড়া ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। এতে ভুক্তভোগীরাই মামলাটি করতে পারেন। যদিও থার্ড পার্টিও এখন মামলা করছে। এটা গ্রামারে পড়ে না। যেটা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মুলে কুঠারাঘাত হয়। আর উনি মস্তিস্ক বিকৃত বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা করতে গেলে সরকারি কোনো হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষার পর চিকিৎসকের সার্টিফিকেট লাগবে যে উনি একটা ‘পাগল’। তাহলে তার সংসদ সদস্য চলে যেতে পারে।”
প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুর হাবীবও বলেছেন যে, উনি যার উদ্দেশ্যে বলেছেন, তিনি তো ফৌজদারি মামলা করতে পারেন। শুধুমাত্র কটু মন্তব্যের জন্য তার সংসদ সদস্য পদ যাওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।”
ডাঃ মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে কি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন যে, ‘‘তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি (জাইমা রহমান) সম্পর্কে ডিজিটাল ফোরাম ব্যবহার করে যেটা করেছে, সেটা তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে চরমতম অপরাধ। উনি একজন নায়িকাকে যে ধরনের থ্রেট করেছেন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করার কথা বলে এটা তো ফৌজদারি অপরাধ। মাহি তো স্বীকার করেছে, এটার তো সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে একজন নারীকে তুলে এনে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েছেন, এর চেয়ে বড় ফৌজদারি অপরাধ আর কী হতে পারে? তার পদত্যাগ তো কোনো শাস্তি না, তার তো জেলে থাকা উচিত। এটা যদি সরকার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যেটা হবে সেটা মন্দের ভালো। মন্ত্রীত্ব যাওয়া তার জন্য খুবই গুরু অপরাধে লঘু দণ্ড। অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত, কারাবাস হওয়া উচিত। ডাঃ মুরাদ হাসান তো একটু শাস্তি পাইলো বুঝলাম, কিন্তু দুই বছর আগে নায়িকাকে তিনি যে হুমকি দিয়েছেন, সেটা তো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানে। রাষ্ট্র তো জানে। জানাশোনার পর তাকে দুই বছর মন্ত্রী রাখার দায়দায়িত্ব কে নেবে? এই টেপটা যে বা যারা ছেড়েছে, তারা তো জানতো, এই ব্যক্তি চূড়ান্ত মস্তিস্কবিকৃত মানুষ। তাহলে কার শক্তিবলে তিনি এতদিন প্রতিমন্ত্রী থাকলেন? তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? এক বা একাধিক ব্যক্তি হলেও তারা তো আরো বড় অপরাধী। তাদের বিচার কে করবে?
সদ্য পদত্যাগীকারব প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন যে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। একটা তো হলো, আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে সংসদেরও একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত। উনি যে দল করেন, সেই দলেরও একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত। সংসদ থেকে বা উনার দল থেকেও একটা ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। পাশাপাশি ফৌজদারি এবং দেওয়ানি আইনেও উনি যে ধরনের মন্তব্য করেছেন বা হুমকি দিয়েছেন, তার জন্য পুলিশ সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে। সংসদ থেকে তো এখনো কোনো ধরনের বক্তব্য আসেনি। সংসদ সদস্যরা তো শপথ নেন, সংবিধানের উপরে। সেই শপথ তো ভঙ্গ হয়েছে। পাশাপাশি সংসদে তো আচরণবিধি আছে। সেটা ভঙ্গ হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে সেটাও দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলার পরও সংসদ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতা আমাদের সবাইকে হতকাক করে দেওয়ার মতো।
এবিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলীও মনে করেন যে, উনি যে, অপরাধ করেছেন সেটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন যে, সংবিধানের ১১১ ধারা অনুযায়ি উনার আচরণ একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভুক্তভোগী চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমি চাই উনি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করুন। তা না হলে উনার বিরুদ্ধে দলের উচিত হবে তাকে সংসদ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটা না করলে জনগণের জন্য দুঃখজনক হবে। তা না হলে সমাজ বা জনগণই হয়ত উদ্যোগ নেবে।
গত তিন মাস ধরে ডাঃ মুরাদ হাসানের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছিলেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আজ বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডঃ মুরাদ হাসান তাকে সব সময় সহযোগিতা করে এসেছেন। কিন্তু তিন মাসে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। তার বক্তব্য সরকার ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিব্রত বোধ করেছে।
১ম সে অস্বীকৃতি জানালেও (ডাঃ মুরাদ হাসান) অবশেষে ক্ষমা চেয়েছেন। মঙ্গলবার তার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন যে, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মমতাময়ী মা, দেশরত্ন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেবো আজীবন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।