রাসেল আহমদ (গোলাপগঞ্জ সিলেট) প্রতিনিধি।।
ঋণ নেই এমন মানুষ সমাজে খুঁজে পাওয়া দায়। সেটা ১ টাকা হোক বা লাখ টাকা। মানুষের জীবনে ঋণ একটা বড় সমস্যা। ঋণে জর্জরিত জীবনে কোনও সুখ আর অবশিষ্ট থাকে না। সকাল-বিকেল পাওনাদারের মুখোমুখি হতে হয় ঋণদারের। আর পেটের জ্বালা কোটিপতিরও থাকে। পেটে বুক লাগলে কোন কিছু না খেলে পেটের জ্বালা কমে না। কিছু খেতে হলে টাকা দরকার। টাকা না থাকলে কোথাও কিছু পাওয়া যায়না।
করোনা মহামারীর কারণে দেশজুড়ে চলছে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন। আর এই লকডাউন মানতে চায় না জনগণ। সিলেটের গোলাপগঞ্জেও নেই তার ব্যতিক্রম। ব্যস্তময় শহর লকডাউনেও ব্যস্ত। যেন লকডাউনের ছিটেফোঁটাও নেই। উপজেলার প্রত্যেকটি মানুষ এবার লকডাউন মানতে নারাজ। তাদের দাবি, গতবারও করোনার কারণে লকডাউনে আমাদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে। বন্ধ রয়েছিলো অনেকের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভারি হতে থাকে ঋণের বুঝা। বাড়তে থাকে মানুষের মাঝে হতাশা।
এদিকে এবছর নতুন করে লকডাউন শুরু হওয়ার আগের দিন গোলাপগঞ্জ বাজারের শতশত ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, এবারের লকডাউনে তারা দোকানপাট খুলা রাখবেন। সরকারের লকডাউনের সিদ্ধান্তকে তারা অসম্মান জানাননি। বরং তারা চান স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলা রাখতে। তাইতো লকডাউনের প্রথম দিন পেরিয়ে দ্বিতীয় দিনেও খুলা রয়েছে দোকানপাট। নির্বিঘ্নে, প্রশাসনের ভয়হীন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।
সামনে রমজান মাস। গতবারের ক্ষতি পোষাতে চান ব্যবসায়ীরা। এজন্য শত বাঁধা আসলেও তারা বন্ধ করবেন না দোকানপাট। সড়কে গণপরিবহন না চললেও চলছে অন্যান্য যানবাহন। তবে যাত্রী নিচ্ছেন কম। শ্রমজীবীরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাজ। যেন লকডাউন নেই। সবকিছু স্বাভাবিক। তবে আগের থেকে মাস্ক পরিধান কিছুটা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। সামাজিক দূরত্ব একেবারেই নেই।
করোনার দ্বিতীয় দিনে উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সবকিছু রয়েছে স্বাভাবিক। লকডাউন চলছে সেটা বুঝা যাচ্ছেনা। প্রতিদিনের ন্যায় লকডাউনে মানুষের কর্মব্যস্ততা।
বেশ কয়েকজন মানুষের সাথে দেখা হয়। কথা হয় তাদের সাথে। জানতে চাওয়া হয় লকডাউন সম্পর্কে। সোজাসাপটা উত্তর। এবারের লকডাউন মানিনা। লকডাউনে ঘরে থাকলে খাব কি? করোনা যদি পৃথিবী থেকে নিয়ে যায়, তবে নিয়েই যাক। করোনার ভয়ে ঘরে থেকে না খেয়ে মরতে চাই না। ঋণের বুঝায় হতাশায় জর্জরিত হয়ে মরতে চাইনা।
গোলাপগঞ্জের আহমদ খান রোডের ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, এবার আমরা দোকানপাট বন্ধ রাখব না। দোকান বন্ধ রাখলে না খেয়ে মরতে হবে।
কাপড় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হুসেন রাজু বলেন, সপ্তাহে কয়েকটা কিস্তি। দোকান বন্ধ রাখলে এসব কিস্তি দিব কি ভাবে।
সিএনজি অটোরিকশা চালক জুমেল আহমদ জিভয়েস২৪ কে বলেন, ৫ জনের সিটে ৩ জন যাত্রী বহন করছি। গাড়ি বন্ধ রেখে তো আর পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে পারব না।
বাস চালক আব্দুল জলিল বলেন, গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে সরকার। গাড়ি না চালালে চুলায় আগুন জ্বলবে না। বড় টেনশনে আছি।
এদিকে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও মাস্ক পরিধান করাতে মাঠে পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রশাসন। অনেককে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।