আলোর ডেস্ক।।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়।
তাতে বলা হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ২০২০ইং সালের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ইং সালের ২৬শে মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে।
‘মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিগুলো কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নির্ধারিত সময়ে যথযাথভাবে করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে সরকার মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২০ইং সালের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ইং সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত ঘোষণা করল।’
১৯২০ইং সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই ১৯৭১ইং সালে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। ২০২০ইং সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হয়েছে। আগামী বছরের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০১৮ইং সালের জুলাইয়ে সরকার (২০২০-২০২১)ইং সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে। এজন্য গত বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’ এবং ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়।
গত ১০ইং জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিবসে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচনের পাশাপাশি ক্ষণগণণার মাধ্যমে মুজিববর্ষের আয়োজন শুরু হয়। সারা দেশে সরকারি, বেসরকারি দপ্তর, প্রতিষ্ঠানে ক্ষণগণনা যন্ত্র স্থাপন করা হয়; শুরু হয় মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ইং মার্চের।
ওই দিন বিকেল ৫টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণণা উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেন। সেই আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আবহও ‘প্রতীকীভাবে’ ফুটিয়ে তোলা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ইং জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যে বিমানে করে দেশে ফিরেছিলেন, সেই আদলের একটি বিমানও হাজির করা হয় ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে।
এরপর সব পরিকল্পনামাফিক এগোতে থাকে। ১৭ইং মার্চ বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘটা করে উদযাপন করবে- এমনই ছিল পরিকল্পনা। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আনুষ্ঠানিক আয়োজন উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সেদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের। পাশাপাশি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। জনসমাগম এড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১৭ইং মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ রাত ৮টায় দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত সম্প্রচারের পর রাষ্ট্রপতির বাণী, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার অনুভূতি প্রকাশ ও তার লেখা কবিতা প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে পাঠ, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাপ্রধানদের ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। সেই আয়োজনের পর জাতির জনকের জন্মদিনের সব অনুষ্ঠান ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মেহেরপুরের মুজিবনগর দিবস উদযাপন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি দিবস, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন, জাতীয় শোক দিবস, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের দিন, জেল হত্যা দিবস সবই অনলাইনে উদযাপিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেগুলোও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উত্তরণের অপেক্ষায় রয়েছে